JEWEL AICH ARKO

Tuesday, January 9, 2024

ব্রিটিশ ভারতে হাওরাঞ্চলের মহান ব্যক্তিত্ব কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকার
January 09, 20240 Comments


সংগ্রাম দত্ত:

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে ও বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি অন্যতম জেলা কিশোরগঞ্জ। হাওর-বাঁওড়ঘেরা বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির এক অনন্য জনপদ কিশোরগঞ্জ। ময়মনসিংহ গীতিকার চন্দ্রাবতী, মহুয়া-মলুয়ার দেশ এই কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের নিদর্শন। শিল্প-সাহিত্য আর লোকসংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ও উর্বর জনপদ হিসেবে কিশোরগঞ্জ অসংখ্য কীর্তিমান মানুষের জন্ম হয়েছে, এদের মধ্যে একজন গুরুদয়াল সরকার। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি আলোকময় সমাজের। এ জন্য তিনি শিক্ষার মশাল জ্বালাতে উদারচিত্তে দান করেছিলেন তারই উপার্জিত ধন-সম্পদ। দেশের ভাটির গভীর হাওরাঞ্চল কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার কাঠইর নামক এক অখ্যাত অজপাড়া গায়ে তাঁর জন্ম। তিনি ১২৬৯ বঙ্গাব্দের(১৮৬২ সাল) ১৬ ই আশ্বিন জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৩৬২ (১৯৫৫ সাল) বঙ্গাব্দের ৬ ই অগ্রহায়ণ ৯৩ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। 

তাঁর পিতার নাম গোপীমোহন সরকার। গুরুদয়াল সরকারেরা ছিলেন তিন ভাই। কৃষ্ণদয়াল সরকার,গুরুদয়াল সরকার আর বিষ্ণুদয়াল সরকার। জন্মেছিলেন এক ধনাঢ্য কৈবর্ত পরিবারে। তাই কেউ কেউ তাঁকে কৈবর্ত রাজ হিসাবে ও উল্লেখ করেছেন। কৈবর্ত রাজ গুরুদয়াল সরকার পৈতৃক সুত্রে পেয়েছিলেন হাওর ভরা জমি আর তাঁদের ছিল পুরুষানুক্রমে বিল ইজারা নিয়ে মাছ ধরে মাছ বিক্রির ব্যবসা। সে আমলে ২০/৩০ গ্রামের মধ্যে ও কোন প্রাইমারি স্কুল ছিল না। তাই তাঁকে ঢোলে সামান্য শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। কেউ বলে তিনি টোলে পড়েছিলেন আবার কেউ বলে একেবারেই নিরক্ষর ছিলেন। শিক্ষার সুযোগ না থাকায় গুরুদয়ালের বেশি দূর লেখাপড়া হয়নি। টোল পাস করা গুরুদয়াল সরকার রামায়ণ, পদ্মপুরাণ ইত্যাদি পড়ায় অভ্যস্ত ছিলেন। উচ্চতর লেখাপড়ার অভাব ও অসুবিধা তিনি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আঠারো শতকের শেষ বা উনিশ শতকের শুরুতে হাওরাঞ্চলে এই ধীবর জনগোষ্ঠীর অনেক অর্থ জমি সম্পদ ছিল। কিন্ত স্কুলের অভাবে তাদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহ তেমন ছিল না। খালিয়াজুরীর সর্ব দক্ষিণ সীমানায় ধনু নদীর পূর্ব পাড়ে ইটনা থানার ধনপুর ইউনিয়নের ধনপুর গ্রাম ও বাজার।


 সুনামগঞ্জের সুরম্য নদী থেকে একটি শাখা সুরমা নামেই দিরাই থানার রাজানগর,শ্যামারচর বাজার,খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুর হয়ে নদীটি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ধনপুরে এসে ধনু নদীতে মিলিত হয়েছে। ধনপুর বাজারের পূর্ব পাশে গ্রামের একেবারে উত্তরে এই শাখা নদীর তীরে একটি বিশাল পাকা সাইড ওয়াল ও বাউন্ডারি করা একটি পুরানো বাড়ি। এটিই কাঠইর গুরুদয়াল সরকারের বাড়ি। কাঠইর একটি ছোট্ট গ্রাম। জানা যায় গুরুদয়াল সরকারের ছিল ৪০ টি হাল,৭০ টি নৌকা ছিল। গৃহস্থি থেকেই বছরে দুই হাজার মন ধান বিক্রি করতেন। জলমহালের মাছ ছাড়া ও ছিল ধনপুর বাজার ও রংপুরে শুটকির ব্যবসা। এখান থেকে রংপুরে শুঁটকি চালান দিতেন। বেতনভূক্ত কারিগর দিয়ে সারা বছর বাড়িতেই জাল তৈরি করতেন। অবশ্য সেই সময় ছিল জলমহাল ব্যবসায় ধীবর শ্রেণীভুক্ত কৈবর্ত জেলে ও মাঝি সম্প্রদায়ের অনুকূলে। জাল যার জল তাঁর। অন্ধ কুসংস্কার ও সামাজিক গোঁড়ামির কারণে উপরোক্ত তিন শ্রেণী ব্যতীত হিন্দু মুসলমান সবার মাছ ধরে বিক্রি করা বা জলমহালের ব্যবসা ছিল অঘোষিত ভাবে নিষিদ্ধ। এটি করলে তখনকার গৃহস্থ পরিবারের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া সমস্যা হতো। তাই সামাজিক ও লোক নিন্দার ভয়ে মানুষ এ পেশায় জড়িত হতো না। 

 


পাকিস্তান আমলে ও হাওরাঞ্চলের বড় বড় জলমহাল ছিল এই কৈবর্ত সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে। মহানন্দ বাবু ও শ্যামবাবু নামে দুই ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন এসব জলমহালের ইজারাদার। গুরুদয়াল সরকারের বাড়িতে দুর্গাপূজা সহ অন্যান্য পূজা পার্বণ হতো। বাড়িতে পাকা দুর্গা মন্দির টি ১৯২৯ সালে নির্মিত। নিজে শিক্ষিত না হলে ও নিজ বাড়িতেই তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যশধাময়ী ফ্রি প্রাইমারি স্কুল। যা এখন সরকারী স্কুল। যে আমলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সহ সিলেটের অনেক অঞ্চলে শিক্ষা শুরুই হয়নি সেই আমলেই ইটনার জয়সিদ্ধির আনন্দ মোহন বসু ১৮৬৮ সালে ময়মনসিংহের প্রথম এমএ প্রথম বিলাতের ক্যামব্রিজ ডিগ্রি ও বাংলার প্রথম রেংলার। বসু পরিবার সারা বাংলায়তো বটেই গোটা ভারতবর্ষে এই পরিবারের পরিচিতি ছিল ।। কাঠইর থেকে দুই মাইল দূরের গ্রাম সহিলা থেকে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ডঃ নীহার রঞ্জন রায়,ইটনা থেকে ব্যারিস্টার ভূপেশ গুপ্ত সেই আমলেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। ভুপেশ গুপ্ত ছিলেন ভারতের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা। এই অঞ্চলের তিন জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে আছে তিনটি বিখ্যাত কলেজ। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ,কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ও হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজ। 


বৃন্দাবন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ইটনা থেকে ছয় মাইল দূরের হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের বিতঙ্গল গ্রামের বৃন্দাবন দাস। তিনি ও ছিলেন কৈবর্ত সম্প্রদায়ের মানুষ। কিশোরগঞ্জ মহকুমা ( ১৯৮৪ সালে জেলা ঘোষণা করা হয় ) শহরে কলেজ প্রতিষ্ঠায় গুরুদয়াল বাবুর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জনশ্রুতি আছে। কিশোরগঞ্জের গন্যমান্য কিছু বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তি বর্গের উদ্যোগ ও মহকুমা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় ১৯৪৩ সালে ,৬ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে অস্থায়ী ভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। তখনকার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ও মঞ্জুরী পেতে গেলে দরকার কলেজের নিজস্ব জমি,অবকাঠামো ও নগদ অর্থ তহবিল। এতো বেশী পরিমাণ অর্থ কোন ভাবেই সংগ্রহ করা সম্ভবপর ছিল না। একটি জনশ্রুতি মতে বৈশাখে ফসল তোলার মৌসুমে কলেজের শিক্ষকেরা এসেছিলেন কলেজের জন্য চাঁদা হিসাবে ধান তুলতে। গুরুদয়াল বাবু তাদের নিকট থেকে যখন জানতে পারলেন কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন । তখন নাকি বলেছিলেন এক মন দুই মন করে ধান নিয়ে কি আর কলেজ করতে পারবেন। যদি কলেজ প্রতিষ্ঠার পুরো টাকাটাই আমি দিয়ে দেই। তখন শিক্ষক গন যেন হাতে আকাশ পেয়ে যান। 

 একটি নির্দিষ্ট দিন তারিখে তাঁকে কিশোরগঞ্জ যেতে বলেন। সেই মোতাবেক তিনি কলেজ প্রতিষ্ঠায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আর একটি জনশ্রুতি মতে ১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জের এসিডও ছিলেন সাদত হোসেন চৌধুরী। তিনি ও কিশোরগঞ্জের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করেন। যাতে তিনি তাতে সারা দিয়ে এককালীন নগদ ৫০০০০ হাজার এক টাকা দান করেছিলেন। কথিত আছে কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁকে উৎসাহ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তাঁর একমাত্র পুত্রবধু যোগমায়া। একমাত্র পুত্রের নাম ছিল মহানন্দ সরকার। যিনি কলিকাতায় মৃত্যু বরণ করেন। আরো জানা যায় যে এই ৪৮ হাজার এক টাকা ছিল ছান্দিনা বিলের প্রথম এক খেউয়ের ( জাল দিয়ে ঘেরাও করা এক বেড় বা এক টান) মাছ বিক্রির টাকা। এই টাকায় কলেজের জন্য সরকারী ভাবে দেওয়া ১৩ একর খাস জমির পাশে আরো জমি কিনে কলেজের নিজস্ব জায়গায় একতলা ভবন বিজ্ঞান ভবন তৈরি করে কলেজের তহবিল সহ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত পূরণ করে কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে। কলেজের নাম কিশোরগঞ্জ কলেজ পরিবর্তন করে নামকরণ হয় কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে। পাকিস্তান আমলে হিন্দু নামে স্হান ও প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের ঢেউয়ে গুরুদয়াল কলেজ নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্ত কিছূ শুভবুদ্ধির সন্পন্ন মানুষের বাধায় তা হতে পারেনি । তখনকার সময় কিশোরগঞ্জে জমিদার সহ আরো অনেক ধনী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু কলেজের সূচনা লগ্নে গাংগাটিয়া জমিদারসহ কিছু বিদ্যুৎসাহী প্রমিনেন্ট ব্যক্তি বর্গের অর্থ সাহায্য ব্যতীত অন্যদের সাহায্য পাওয়া যায়নি। কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় একটি শর্ত ছিল তাঁর পরিবারের উত্তরাধিকারীদের সুপারিশে প্রতি বছর চারজন ছাত্র ছাত্রী বিনা বেতনে পড়তে পারবে। 

 

 

এই চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করার সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ গুরুদয়াল সরকারকে জিজ্ঞাসা করেছিল কোন সম্প্রদায়ের চারজনকে আপনি বৃত্তি দিবেন। তাঁর সোজাসাপ্টা উত্তর ছিল " সম্প্রদায় আবার কি? আমি কৈবর্ত মাছ বিক্রি করে খাই। আমার মাছ হিন্দু- মুসলিম,মালী- ঢুলি- চাড়াল,মেথর- ডোম সবাই কিনে খায়। বৃত্তি পেলে সব জাতের ছেলে মেয়েরা পাবে " (তথ্য সুত্র কিশোরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থ)। স্কুলে লেখাপড়া না করেও যে মানুষ অনেক মহৎ কাজ ও জ্ঞানের অধিকারী হতে পারেন গুরুদয়াল সরকার তার প্রমাণ। কলেজ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানালে কথিত আছে তিনি দুই নৌকা ভর্তি করে মিষ্টি,আম ও আনারস নিয়ে গিয়েছিলেন। তা দিয়েই অভ্যাগত অতিথি ও ছাত্র ছাত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। একটা সময়ে কৈবর্ত জেলে মাঝি সহ ধীবর সম্প্রদায় ছিল সমাজে পিছে পড়া। এখন আর সেই অবস্থা নেই। শিক্ষা দীক্ষা সহ সব ক্ষেত্রে সমাধান তালে এগিয়ে যাচ্ছে এই সম্প্রদায়। এক সময় সুনামগঞ্জ মহাকুমার ধীরাইয়ের অক্ষয় কুমার দাস ছিলেন এই সম্প্রদায়ের শীর্ষ ব্যক্তি। যিনি ছিলেন আসাম প্রাদেশিক মন্ত্রী ও পাকিস্তানে কয়েক টার্ম মন্ত্রী। এছাড়া আছেন অদৈত্ব মল্ল বর্মণ যিনি তিতাস পাড়ের জেলেদের জীবন চিত্র নিয়ে লিখেছেন বিখ্যাত উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম। আরো আছে একুশে পদক প্রাপ্ত গুণীজন লেখক ও শিক্ষাবিদ হরি শংকর জলদাস। কিশোরগঞ্জ খড়মপট্টি স-মিলের কাছে গুরুদয়াল বাবুর একটি নিজস্ব বাসা ছিল ( হলুদ রংয়ের)। যা পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রতিবেশী গ্রাম খালিয়াজুরীর আদমপুর গোয়ালবাড়ীর চেয়ারম্যান ক্ষেত্রমোহন ভৌমিক ও চেয়ারম্যান দ্বারিকনাথ ভৌমিকদের যৌথ পরিবারের কাছে বিক্রি করে দেন। 

গুরুদয়াল সরকারের বর্তমান উত্তরাধিকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে তাঁদের পূর্ব পুরুষ গুরুদয়াল সরকারের এই মহৎ কাজের সামাজিক সন্মান ও মর্যাদা তাঁরা অবশ্যই ভোগ করছে। যা তাঁদের প্রাপ্য। মহাপ্রাণ এই ব্যক্তির উদার এই দানের স্বীকৃতিতে কলেজ প্রাঙ্গণে ২০০৯-এ স্থাপন করা হয় তাঁর আবক্ষ ভাষ্কর্য। অপ্রিয় সত্য হলেও দুঃখজনক এই যে ১৯৭৩ সালে সরকারীকরণের পর নাম পালটে যায় তাঁর বাড়ির প্রাঙ্গণে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করা 'যশোধাময়ী ফ্রি প্রাইমারি স্কুল’-এর। সাধারণ মানুষের মনে করেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশে 'যমোধাময়ী' নামটি রেখে সরকারিকরণ করা যেতো। গুরুদয়াল সরকারের মতো মহৎ মানুষেরা কখনো হারিয়ে যান না। তাঁরা তাঁদের কর্মের মধ্যেই বেঁচে থাকেন কাল থেকে কালান্তরে প্রজন্মের পর প্রজন্মে। প্রাইমারি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সমাজ পরিবর্তনে তাঁর ভূমিকা ও অবদান সম্পর্কে তিনি আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Reading Time:

Wednesday, November 15, 2023

আপনার ফেসবুক একাউন্ট রাখুন নিরাপদ থাকুন সচেতন
November 15, 20230 Comments


ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদ রাখার সেরা ৯ উপায়।

ফেসবুক একাউন্ট নেই এমন মানুষের সংখ্যা সম্ভবত: খুবই নগণ্য। সামাজিক যোগাযোগ রক্ষায় বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ার মধ্যে ফেসবুক শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এর সুবিধা যেমন আছে, অসুবিধাও কম নয়। ফেসবুকের ষ্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অনেককেই আইনের কাঠগড়ায় মাঝে মধ্যেই দাঁড়াতে হয়। সবচেয়ে বিপদজনক পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়, যখন কারো ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়।





উপরোক্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় “ফেসবুক একাউন্ট”কে নিরাপদ রাখা একান্ত জরুরী।



“ফেসবুক একাউন্ট” নিরাপদ রাখার সেরা ৯টি উপায়:

১. ফেসবুক একাউন্ট খোলার সময় আপনার যে মোবাইল নম্বর বা ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করবেন সেগুলো সবসময় সচল রাখুন। কেননা হ্যাকার আপনার একাউন্টের পাসওয়ার্ড বা ইমেইল এড্রেস পরিবর্তন করলে সাথে সাথেই ফেসবুক হতে ইমেইল পাঠিয়ে আপনাকে (একাউন্ট হোল্ডারকে) সতর্ক করে একটি Recovery লিংক পাঠিয়ে দেয়; তাতে ক্লিক করে সহজেই হ্যাক হওয়া আইডি রিকভার করা সম্ভব।



২. ফেসবুক একাউন্টে Two Factor Authentication অপশনটি চালু রাখুন (ফেসবুকের সেটিংস থেকে Security and login > use two-factor authentication এ গিয়ে মোবাইল নম্বর কিংবা ইমেইল যুক্ত করুন)।





৩. সরল/দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। ব্যক্তিগত তথ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্য (যেমনঃ জন্মতারিখ, নিজের নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ইত্যাদি) পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।



৪. Capital letter, small letter, number & symbol মিলিয়ে কমপক্ষে ১২ ক্যারেক্টারের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।




৫. ফেসবুকের ক্ষেত্রে Trusted Contact-এ ৩ থেকে ৫ জন ঘনিষ্ঠ ফেসবুক বন্ধুকে যুক্ত রাখুন। এর ফলে আইডি হ্যাক হয়ে গেলেও তা উদ্ধার করা সহজ হবে।



৬. ফেসবুক একাউন্ট খোলার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম ও জন্মতারিখ ব্যবহার করুন। এতে আপনার আইডি হ্যাক হলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে।





৭. জন্ম তারিখ, ফোন নাম্বারসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত রাখবেন না। এতে বিভিন্ন রকমের হয়রানি ও প্রতারণা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা সহজ হবে।



৮. ফেসবুকের ক্ষেত্রে Privacy Settings – অপশনটি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে প্রোফাইল লক করে রাখুন।



৯. স্ট্যাটাস, ছবি ইত্যাদি সতর্কতার সাথে এবং প্রাইভেসি নিশ্চিত করে শেয়ার করুন। মনে রাখবেন, ফেসবুকে নিজের জীবনাচরণকে যতবেশি উন্মুক্ত করবেন আপনি ততবেশি ঝুঁকিতে থাকবেন।

বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোর্টার ঢাকা থেকে প্রকাশিত সতর্কবার্তা:




  আপনার ফেসবুক একাউন্ট রাখুন নিরাপত্তা থাকুন সচেতন।


Reading Time:

Monday, October 23, 2023

ডা: অন্নদাচরণ খাস্তগীর
October 23, 20230 Comments

 

অন্নদাচরণ খাস্তগীর (জন্ম: ১৮৩০ - মৃত্যু: ১৮৯০) (ইংরেজি Annadacharan Khastagir) একজন বিখ্যাত চিকিৎসক, সমাজসংস্কারক এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধকার । অন্নদাচরণের আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডী । তার বাবা ছিলেন সরকারি উকিল রামচন্দ্র খাস্তগীর । তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারী কাজে যোগ দেন এবং মথুরা, বৃন্দাবন এবং উত্তর ভারতের নানা জায়গা ঘুরে কলকাতায় আসেন । তিনি কিছুদিন মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষকতাও করেন । বন্ধু বিদ্যাসাগরের আগ্রহে শেষ দিকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও করতেন । তার কন্যা কুমুদিনী চট্টগ্রামের প্রথম মহিলা স্নাতক । [১] চট্টগ্রামে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল আছে। অনেকেই জানেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তর পিতা যাত্রামোহন সেন তার শ্বশুরের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্য ১৯০৭ সালে জামাল খানে এই স্কুলটি স্থাপন করেন। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের শ্বশুর হিসেবেই পরিচিত হয়ে আছে ডাক্তার খাস্তগীর নামের আড়ালে ডা. অন্নদাচরণ খাস্তগীর। কিন্তু ডা. খাস্তগীর নিজেও যে একজন প্রথিতযশা ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর কথা এ অঞ্চলের মানুষ খুব একটা জানে না। গতকাল ২১ জুলাই ছিল ১৩৪তম তিরোধান দিবস। তাই আজকের এই সামান্য নিবেদন। ভারতবর্ষের প্রথম প্রজন্মের গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকদের মধ্যে ডা. খাস্তগীর ছিলেন অগ্রগণ্য। শুধু চিকিৎসক নয়, সমাজ সংস্কারক ও প্রবন্ধলেখক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ১৮২৯ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামচন্দ্র খাস্তগীর ছিলেন সরকারি উকিল। পিতার ইচ্ছা ছিল ছেলে বড় হয়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হোক। সেভাবেই তিনি লেখাপড়া করছিলেন। চট্টগ্রাম ইংরেজি স্কুল থেকে ছাত্রবৃত্তি পাশ করার পর অন্নদা ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় তিনি আরো দুজন ছাত্রের সঙ্গে থাকতেন। এদের মধ্যে একজন এক রাত্রের কলেরায় মারা গেলে তিনি দারুণ মনোকষ্টে পড়েন। স্থির করেন বড়ো হয়ে মানুষের মৃত্যু জরার বিরুদ্ধে লড়বেন। ভবিষ্যতে ডাক্তার হবেন। পরবর্তীতে তিনি সিনিয়র পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ৫৫ টাকা বৃত্তি নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রথম পরীক্ষাতেই প্রথম হন। কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন তাকে লন্ডনে পাঠানো হবে পরবর্তী শিক্ষার জন্য। কিন্তু সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী ও জাত খোয়ানোর ভয়ে তার পরিবার তাঁকে লন্ডন যেতে অনুমতি দেয়নি। তাঁর স্থলে দ্বিতীয় রাজেন্দ্র চন্দ্র লন্ডন যান। মেডিকেল থেকে পাশ করে সরকারি মেডিকেলে চাকরি নেন। আরাকানে তিনি এসিস্টেন্ট সার্জন হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তাকে পালকি যোগে যেতে হয়েছিল। তার উদ্যোগে কলকাতার সঙ্গে আরকানের জাহাজ চলাচল শুরু হয়। তারপর তাকে বরিশালে বদলি করা হয়। সেখান থেকে উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে তিনি চাকরি করে অবশেষে কলকাতায় ফিরে আসেন। কিছুদিন কলকাতা মেডিকেলে শিক্ষকতা করেন। বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা ছিল। ১৮৮৭ সালের ২১ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সময় বিদ্যাসাগর উপস্থিত থাকতে না পারায় বিদ্যাসাগরের আফসোসের অন্ত ছিল না। তার তিন পুত্র ও চার কন্যা ছিল। তিনি তাঁর তিন কন্যাকেই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করছিলেন। তার বড়ো কন্যা কুমুদিনী চট্টগ্রামের প্রথম মহিলা স্নাতক। দ্বিতীয় কন্যা মনোমোহিনীর সঙ্গে বিখ্যাত ব্রাহ্মনেতা, বক্তা ও বাঙালি হিন্দু সমাজের অন্যতম ধর্মসংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের বড়ো ছেলে করুণাচন্দ্র সেনের বিয়ে দেন। আর তৃতীয় কন্যা বিনোদিনীকে বিয়ে দেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত জমিদার যাত্রামোহন সেনগুপ্তের সঙ্গে। ব্রাহ্মধর্ম বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন ডা. খাস্তগীর। তিনি প্রথম মহিলাদের প্রকাশ্যে প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেন। ‘চিকিৎসা সম্মিলনী’ নামের একটি চিকিৎসা বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকার সহ-সম্পাদনা করতেন তিনি। গভর্নর জেনারেল লর্ড নর্থব্রুক বর্ধমান অঞ্চলের ম্যালেরিয়া সমস্যা নিয়ে প্রবন্ধ আহবান করেন। সেবার ডা. খাস্তগীরের প্রবন্ধ প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল। বাংলা ও ইংরেজিতে তিনি অনেক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো: মানব জন্মতত্ত্ব, ধাত্রীবিদ্যা, নবপ্রসূত শিশুর পীড়া ও চিকিৎসা, স্ত্রীজাতির ব্যাধিসংগ্রহ, আয়ুবর্ধন, শরীর রক্ষণ, পারিবারিক সুস্থতা। চট্টগ্রামের এই গৌরবকে আজ সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি। #ইতিহাসেরপথেজয়দীপ (শ্রদ্ধেয় জয়দীপ দে শাপলুর পোস্ট থেকে)। ঊনবিংশ শতাব্দীতে নারীর মুক্তি এবং অধিকার রক্ষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব । এই কাজে তার সহযোগী ছিলেন দুর্গামোহন দাস, গুরুচরণ মহলানবিশ, রজনীনাথ রায়, এবং দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় । [১] অন্নদাচরণ চিকিৎসক সম্মিলনী নামক একটি মাসিক পত্রিকা (১২৯১ বঙ্গাব্দ - ১২৯৯ বঙ্গাব্দ) সম্পাদনা করতেন । তার রচিত উল্লেখযোগ্য বই হল: মানব জন্মতত্ত্ব, ধাত্রীবিদ্যা, নবপ্রসূত শিশুর পীড়া ও চিকিৎসা, স্ত্রীজাতির ব্যাধিসংগ্রহ, আয়ুবর্ধন, শরীর রক্ষণ, পারিবারিক সুস্থতা প্রভৃতি । [১] রচনাবলী সম্পাদনা মানব জন্মতত্ত্ব ধাত্রীবিদ্যা নবপ্রসূত শিশুর পীড়া ও চিকিৎসা স্ত্রীজাতির ব্যাধিসংগ্রহ আয়ুবর্ধন (তথ্য সংগ্রহে: রামকেশব খাস্তগীর)

Reading Time:

Tuesday, July 18, 2023

মল মাস কি? মল মাস বলতে কি বোঝায়?
July 18, 20230 Comments


 

মল মাস অর্থ

পৌরহিত্যের ভাষায় মল মাস হল ‘মলিন মাস’। হিন্দি বলয়ে বলা হয় ‘অধিক মাস’। অর্থাৎ, অতিরিক্ত মাস। এই অধি মাসে যেহেতু কোন পালনীয় তিথি বিদ্যমান থাকে না, তাই এই মাসে কোন বৈদিক কর্মকাণ্ড হয় না। সেই জন্যই একে মলিন মাস বা মল মাস বলা হয়।

একই মাসে দু’টি অমবাস্যা তিথি পরলেও সেটিকে মলমাস বলা হয়। ‘মল’ শব্দের অর্থ অশুভ। তাই এই মাসকে বর্জিত হিসেবে হিন্দু ধর্মের কোনও পূজা বা শুভ অনুষ্ঠান যেমন বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি হয় না। তবে শ্রাদ্ধ বা সপিণ্ডকরণ করা যায়।



বৈদিক কর্মকাণ্ডের জন্য এটি শুভ না হলেও পরমার্থিক কর্মকাণ্ডের জন্য এটি শুভ। এই মাসটি সমস্ত প্রকার কর্মশূন্য। তাই এই মাসটি কৃষ্ণ নাম করার জন্য উপযোগী। এই মাসে ভগবানের নাম করলে তা অধিক ফলপ্রদ হয়। তাই মলমাস কে পুরুষোত্তম মাস ও বলা হয়। তাই মলমাস একদিক থেকে অশুভ হলেও অন্যদিকে শুভ।


মল মাস অর্থ

পৌরহিত্যের ভাষায় মল মাস হল ‘মলিন মাস’। হিন্দি বলয়ে বলা হয় ‘অধিক মাস’। অর্থাৎ, অতিরিক্ত মাস। এই অধি মাসে যেহেতু কোন পালনীয় তিথি বিদ্যমান থাকে না, তাই এই মাসে কোন বৈদিক কর্মকাণ্ড হয় না। সেই জন্যই একে মলিন মাস বা মল মাস বলা হয়।

একই মাসে দু’টি অমবাস্যা তিথি পরলেও সেটিকে মলমাস বলা হয়। ‘মল’ শব্দের অর্থ অশুভ। তাই এই মাসকে বর্জিত হিসেবে হিন্দু ধর্মের কোনও পূজা বা শুভ অনুষ্ঠান যেমন বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি হয় না। তবে শ্রাদ্ধ বা সপিণ্ডকরণ করা যায়।



বৈদিক কর্মকাণ্ডের জন্য এটি শুভ না হলেও পরমার্থিক কর্মকাণ্ডের জন্য এটি শুভ। এই মাসটি সমস্ত প্রকার কর্মশূন্য। তাই এই মাসটি কৃষ্ণ নাম করার জন্য উপযোগী। এই মাসে ভগবানের নাম করলে তা অধিক ফলপ্রদ হয়। তাই মলমাস কে পুরুষোত্তম মাস ও বলা হয়। তাই মলমাস একদিক থেকে অশুভ হলেও অন্যদিকে শুভ।

 
মল মাস বলতে কি বোঝায়?

এখন যে চান্দ্র মাসে সূর্য একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করে না, পুরো মাস জুড়ে একটি নির্দিষ্ট রাশিতে অবস্থান করে সেই মাসের নাম পরবর্তী মাসের নাম অনুসারেই হয়। আর এর সাথে পরের মাসে অধিক শব্দটি ও বসে যায়। এই অধিক মাস টিকেই বলা হয় মল মাস



বাংলায় দুই থেকে তিন বছর অন্তর অন্তর একটি মল মাস হয়। কারণ সূর্যের একমাস তিরিশ দিনে হলেও চাঁদের একমাস সাতাশ থেকে সাড়ে উনত্রিশ দিনে হয়। কয়েকদিনের এই ফারাক এক বছরে গিয়ে দাঁড়ায় এগারো দিন। আর এই ফারাকের জন্যই কোনও কোনও বছরে মলমাস পিছিয়ে যায়।

আমরা সবাই জানি মল মাসে কোন শুভ কার্য হয়না। মলমাস বলতে কী বোঝায়, মলমাস আসলে কী, কেন এই মাসে কোন শুভ কার্য হয়না আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করা হলো



সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে হিন্দুদের বর্ষপঞ্জি তৈরি হয়। চন্দ্রপথ কে ২৮ ভাগে ভাগ করে এক একটি ভাগের নামে একটি নক্ষত্র কে রাখা হয়েছে। এই ভাগ গুলি হল :-

অশ্বিনী , ভরণী , কৃত্তিকা , রোহিণী , মৃগশিরা , আর্দ্রা , পুনর্বসু , পুষ্যা , অশ্লেষা , মঘা , পূর্ব ফল্গুনী , উত্তর ফল্গুনী , হস্তা , চিত্রা ,স্বাতি , বিশাখা , অনুরাধা , জ্যেষ্ঠা , মূলা ,পূর্বাষাঢ়া , উত্তরাষাঢ়া , অভিজয়িনী , শ্রবণা , ধনিষ্ঠা , শতভিষা , পূর্বভাদ্রপদ , উত্তর ভাদ্রপদ , রেবতী ।



চলমান নক্ষত্রের নাম থেকেই বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় শ্রাবণ ইত্যাদি মাসের নাম হয়েছে। যে মাসের পূর্ণিমায় চিত্রা নক্ষত্রা আছে সেই মাসের নাম চৈত্র আবার যে মাসের পূর্ণিমায় অশ্বিনী নক্ষত্র আছে সেই মাসের নাম আশ্বিন।
মল মাস বলতে কি বোঝায়?

এখন যে চান্দ্র মাসে সূর্য একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করে না, পুরো মাস জুড়ে একটি নির্দিষ্ট রাশিতে অবস্থান করে সেই মাসের নাম পরবর্তী মাসের নাম অনুসারেই হয়। আর এর সাথে পরের মাসে অধিক শব্দটি ও বসে যায়। এই অধিক মাস টিকেই বলা হয় মল মাস



বাংলায় দুই থেকে তিন বছর অন্তর অন্তর একটি মল মাস হয়। কারণ সূর্যের একমাস তিরিশ দিনে হলেও চাঁদের একমাস সাতাশ থেকে সাড়ে উনত্রিশ দিনে হয়। কয়েকদিনের এই ফারাক এক বছরে গিয়ে দাঁড়ায় এগারো দিন। আর এই ফারাকের জন্যই কোনও কোনও বছরে মলমাস পিছিয়ে যায়।

আমরা সবাই জানি মল মাসে কোন শুভ কার্য হয়না। মলমাস বলতে কী বোঝায়, মলমাস আসলে কী, কেন এই মাসে কোন শুভ কার্য হয়না আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করা হলো



সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে হিন্দুদের বর্ষপঞ্জি তৈরি হয়। চন্দ্রপথ কে ২৮ ভাগে ভাগ করে এক একটি ভাগের নামে একটি নক্ষত্র কে রাখা হয়েছে। এই ভাগ গুলি হল :-

অশ্বিনী , ভরণী , কৃত্তিকা , রোহিণী , মৃগশিরা , আর্দ্রা , পুনর্বসু , পুষ্যা , অশ্লেষা , মঘা , পূর্ব ফল্গুনী , উত্তর ফল্গুনী , হস্তা , চিত্রা ,স্বাতি , বিশাখা , অনুরাধা , জ্যেষ্ঠা , মূলা ,পূর্বাষাঢ়া , উত্তরাষাঢ়া , অভিজয়িনী , শ্রবণা , ধনিষ্ঠা , শতভিষা , পূর্বভাদ্রপদ , উত্তর ভাদ্রপদ , রেবতী ।



চলমান নক্ষত্রের নাম থেকেই বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় শ্রাবণ ইত্যাদি মাসের নাম হয়েছে। যে মাসের পূর্ণিমায় চিত্রা নক্ষত্রা আছে সেই মাসের নাম চৈত্র আবার যে মাসের পূর্ণিমায় অশ্বিনী নক্ষত্র আছে সেই মাসের নাম আশ্বিন।

Reading Time:
শ্রীরাম কথা
July 18, 20230 Comments


রাম অর্থাৎ তিনি আনন্দ প্রদান করেন। তিনিই পরম ভোক্তা, কিন্তু যখন আমরা সেই পরম ভোক্তা পরমেশ্বর ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হই, তখন শুধু তিনিই নন, আমরাও পরম আনন্দে নিমগ্ন হই।

রাম হলো সবার আত্মা সীতা আমাদের হৃদয়


রাবন হলো তোমার মন যা আত্মা হতে তোমার হৃদয় হরণ করেছে। লক্ষন হল সবার বিবেক যা সবসময় তোমার সাথে থাকে। হনুমান হলো তোমার অনুমান এবং সাহস যা তোমার আত্মাকে সজাগ করার জন্য তোমার হৃদয়কে পূর্ণ উদ্ধার করে।


অনেক খুজে বড় ভ্রাতাকে পেয়ে ভরত শ্রীরামের পাতার কুটিরের সামনে এলেন। ভরতকে দেখেই শ্রীরামের চোখে জল আসে। ভরত অভিমানে বললেন,

“মেয়েদের বুদ্ধি কম, এটা কি আপনি জানেন না? তাদের কথায় আপনি কেন রাজ্য ছেড়ে এলেন।”

শ্রীরাম বললেন,


আমি রাজ্য ছেড়েছি বাবার জন্য।তিনি যা কথা দিয়েছেন, আমার প্রতি দুর্বলতায় যদি সেই কথা তিনি না রাখেন অযোধ্যার অপমান হত। সিংহাসন সামলানো সহজ কথা না।

ভরত জানালেন যে সেই সত্য রক্ষায় বাবা যে অনেক কষ্ট পেলেন। এই বয়সে এত কষ্ট হলে কি আর কেউ বাঁচে? হয়ত সেই কারনেই তিনি সাত দিনের মাথায় মারা গেলেন।



শ্রীরাম বাবার মৃত্যু খবর পেয়ে কাঁদতে লাগলেন।

ভরত বললেন, 

মরার কালে বাবার পাশে কোনও ছেলে ছিল না। তার দেহ তেলে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল। আমি মামাবাড়ি থেকে ফিরে অন্তেষ্টি করেছি। কিন্তু আপনি বড় ছেলে, আপনার কর্তব্য আছে।

তখন বশিষ্ট মুনির বিধানে চিত্রকূটের সব মুনিদের নেমন্তন্ন করে ফল্গু নদীর ধারে আবার দশরথের শ্রাদ্ধ করল রাম। ভরত টাকা পয়সা এনেছিল এই কারনেই।



এরপর দুই ভাই রাজনৈতিক আলোচনায় বসলেন। শ্রীরাম ফিরে যেতে পারবে না। রাজা হয়ে সে ঘোষণা করেছে একবার, কিন্তু ভরতও রাজা হলে লোকে মানবে না। তখন রামই বুদ্ধি বার করলেন যে ভাই তুমি এক কাজ কর পাশেই নন্দীগ্রাম, সেখানে নতুন রাজধানী করো, করে দেশ চালাও।

ভরত বললেন


ঠিক আছে, তোমার প্রতিক হিসাবে তোমার পাদুকা থাকবে অযোধ্যার সিংহাসনে।লোকে জানবে তুমিই রাজা, তাহলে আর সমস্যা হবে না।

ভরত রাজ্যে ফিরে স্বর্গের বিশ্বকর্মার মত শ্রেষ্ঠ কারিগরকে দিয়ে সুন্দর করে নতুন রাজধানী বানালেন নন্দীগ্রামে। এবার কৌশল্যা ও কৈকেয়ী দুজনেই রাজমাতা হল। মহিলামহলের সমস্যা মিটল।



চিত্রকূটে সুন্দর পরিবেশে শ্রীরাম থাকেন। মুনিরা আছে চারিদিকে। এক বছর কেটে গেল সেখানে। দশরথের মৃত্যুর বর্ষপালন অনুষ্ঠান করা দরকার। রাম গেল সেই সব খোঁজ খবর নিতে। সীতা ফল্গুনদীর তীরে বালি নিয়ে খেলা করছে। পাশেই তুলসী গাছ। এক ব্রাহ্মণকে সাক্ষী রেখে সীতা নিজেই বালি দিয়ে প্রায় নিখরচায় দশরথের শ্রাদ্ধ করে ফেললেন। রাম ফিরলে সীতা জানালেন, যে শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে, দশরথের আত্মা এসে পিণ্ড নিয়ে গেছে। কাজেই আর কোনও আয়োজন দরকার নাই।

শ্রীরামের এই কথা বিশ্বাস হয় না। তখন সীতা ব্রাহ্মণকে সাক্ষী মানে। ব্রাহ্মন পালটি খেয়ে জানায় সে এসব কিছুই জানে না। কবে সীতা শ্রাদ্ধ করল, কবে তা দশরথ নিল—সে এসব দেখেনি।



তখন সীতা তুলসীকে আর ফল্গু নদীকেও সাক্ষী মানে কিন্তু তারাও ব্রাহ্মণের পক্ষে দাঁড়ালো, কেউই এসব জানে না, রামের আবার শ্রাদ্ধ করা উচিত। বটগাছ এসে তখন রামকে বলে,


তুমি নিজেকে প্রশ্ন করো রাম। নিজেই ঠিক করে ভাবো কাকে বিশ্বাস করা উচিত তোমার। কে তোমার প্রকৃত কাছের লোক?



কল্পবৃক্ষ বটবৃক্ষের কথায় রাম মেনে নিলেন যে সীতার শ্রাদ্ধ বৈধ। সীতা ব্রাহ্মণকে অভিশাপ দেয় যে, তুমি সমাজের মাথা হয়ে আছ ঠিকই কিন্তু জানবে তোমার কষ্ট যাবে না। চিরকাল ব্রাহ্মণ জাত ভিখারি হয়ে থাকবে এই পৃথিবীতে।

তুলসীকে সীতা অভিশাপ দেয় যে সে ছোট ঝোপ হয়ে থাকবে, আর যত শেয়াল-কুকুর তাকে দেখেই প্রস্রাব করবে তার গায়ে।



আর ফল্গু নদীকে অভিশাপ দিল যে ফল্গু বালিচাপা পড়বে। লোকে জানবেও না যে নীচে ফল্গু নদী আছে , সবাই এমনকি পশুরাও তার বুকের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবে।

রাম-লক্ষ্মন-সীতা চিত্রকূটে ভালোই ছিলেন। অনেক প্রতিবেশী। কিছুদিন পরে চিত্রকূটে খড় ও দূষণ নামে রাক্ষসদের অত্যাচার বাড়ল। তারা লঙ্কার রাজা রাবণের আত্মীয়।



মুনিরা ভয়ে সিদ্ধান্ত নিল সেই পাহাড়ী গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করবে। তারা এসে রামকে জানাল, তারা চলে যাবে রাক্ষসের ভয়ে।

রামও ঠিক করলেন আরও দক্ষিনে রওনা দেবে। মুনিরা না থাকলে সীতার নিরাপত্তা থাকবে না। তাছাড়া অনেক বছর পেরিয়েই গেল এভাবে। দেশ যা দেখার দেখে নিতে হবে। সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে আসমুদ্র হিমাচল সবার সঙ্গে। নানা মুনির কাছে নানা অস্ত্র পেয়ে ইতিমধ্যেই রাম শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন অনেক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যতদূর যাওয়া যায়, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়,দেশ দেখা যায় ততই ভালো।



চিত্রকূট পাহাড় থেকে তারা এল গয়ায়। সেখানে এসে জানা গেল পিতৃপুরুষের পিণ্ডদান করতে হয় গয়ায়। সীতা জানতে চায় রামের কাছে, এই জায়গাটায়ই কেন পিণ্ডদান করা হয়? শ্রাদ্ধ তো আগেই সবাই করে।

রাম জানালেন গয়ায় গয়াসুর নামে এক মহাবীর রাক্ষস বাস করত। সে বার বার অশ্বমেধ ইত্যাদি যজ্ঞ করে স্বর্গ-মর্ত্য জয় করে ফেলেছিল। দেবতারা ভয় পেয়ে ব্রহ্মার কাছে আর্জি জানায় গয়াসুরকে মারতে হবে নইলে সে সব দখল নেবে। ব্রহ্মা এসে গয়াসুরকে বলে তোমার দেহের উপরে যজ্ঞ হবে, এটাই আদেশ। ব্রহ্মাকে গয়া শ্রদ্ধা করত, সে আত্মবিশ্বাসীও ছিল, গয়াসুর মেনে নেয়।



সমস্ত মাল পত্র নিয়ে তার দেহ ঢেকে, অনেক ঘি ঢেলে আগুন জ্বেলে যজ্ঞ হওয়ার পরে সকলে গয়াসুরের মৃত্যুর জন্য আনন্দ করছে কিন্তু গয়াসুর যজ্ঞশেষে উঠে দাঁড়ল। তখন আর উপায় নেই দেবতাদের বাঁচানোর দেখে ব্রহ্মা তাকে মাথায় পা দিয়ে মেরে ফেলল।

কিন্তু সেই গয়াসুরের নামে জায়গাটার নামকরন করল আর ব্রহ্মার বরে সব লোককে একবার অন্তত এই গয়াসুরের দেশে আসতেই হয় বাবা-মা এর পিণ্ড দিতে ও জানতে হয় গয়াসুরের নাম।



গয়ায় এসে পিণ্ডদান না করলে কোনও আত্মার মুক্তি নেই অর্থাৎ গয়া বিখ্যাত হয়ে গেল মৃত্যুর বা জীবনের বদলে।

তারপর শ্রীরাম ও লক্ষ্মণ গয়ায় পিণ্ডদান করল মৃতপিতা দশরথ রাজার আত্মার সদগতির জন্য।

Reading Time:
অশ্বত্থামাকে কেন শ্রী কৃষ্ণ অভিশাপ দিয়াছিল?
July 18, 20230 Comments

           অশ্বত্থামাকে কেন শ্রী কৃষ্ণ অভিশাপ দিয়াছিল? অশ্বত্থামার অমরত্ব কেন অভিশাপ?

মহাভারতের অশ্বত্থামাকে সবাই জানে গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র, সাহসী যোদ্ধা এবং দুর্যোধন নেতৃত্বাধীন কৌরব সেনার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই অশ্বত্থামা।

শিবের তপস্যা করে তাঁর বরদানে মহা-শক্তিশালী পুত্রলাভ করেছিলেন দ্রোণাচার্য। গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র ও সাত চিরঞ্জীবীদের একজন ছিলেন এই অশ্বত্থামা। স্বয়ং দেবতা শিব নিজে তাকে অমরত্বের বর দিয়েছিলেন। দেবাদিদেবের বরে অশ্বত্থামার কিছু অনন্য শক্তি ছিল। অন্যদের তুলনায় বেশি ক্ষমতাশালী হওয়ার পাশাপাশি, অশ্বত্থামার কপালে একটি রত্ন ছিল। যে কারণে, তাঁর মধ্যে দৈবিক শক্তি ছিল। অশ্বত্থামা ছিলেন অজেয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ব্যথা ও শ্রান্তি তাঁকে ছুঁতে পারত না। সর্বোপরি, তিনি ছিলেন ‘চিরঞ্জিবী’। মহাদেবের বরে তিনি অমরত্বলাভ করেছিলেন।



কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন দ্রোণাচার্য-পুত্র। দুর্যোধনকে গুরুতর জখম অবস্থায় দেখে, অশ্বত্থামা পণ করেছিলেন, পাণ্ডবদের থেকে তিনি এর প্রতিশোধ তুলবেন। একইসঙ্গে বাবাকে ছলের মাধ্যমে হত্যা করার বদলাও নেবেন।




মহাভারতের মহাবীর ছিলেন অশ্বথামা। মনে করা হয়, গোটা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ফয়সালা একা করে ফেলার ক্ষমতা ছিল তাঁর। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপে মর্মান্তিক পরিণতি হয় তাঁর। মহাভারত অনুযায়ী অমরত্ব লাভ করা অশ্বথামা আজও নাকি ঘুরে বেড়ান। শিশুহন্তা অশ্বথামার মুক্তি নেই, শান্তিও নেই।



মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাতপুরা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত আসিরগড় ফোর্ট। এই কেল্লাতেই নাকি আজও বাস করেন অশ্বথামা। এই কেল্লার শিবমন্দিরে প্রতিদিন নাকি পুজো করেন অশ্বথামা। রোজ সকালে এই মন্দিরে দেখা যায় টাটকা ফুল আর আবির শিবলঙ্গের কাছ রাখা। কে সবার আগে রোজ এখানে পুজো করে যান, তা কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। হাজার হাজার বছর ধরে শিবপুজো করে অশ্বথামা তাঁর পাপস্খালনের চেষ্টা করছেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস।

অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা ছিলেন এই গুরু দ্রোণ। যুদ্ধে তাকে ঠেকানো যাচ্ছিলো না কোনভাবেই। বিপাকে পড়লেন পঞ্চপাণ্ডব। পরামর্শের জন্য তারা শরণাপন্ন হলেন শ্রীকৃষ্ণের। তিনি পান্ডবদের বলেন, কোন একভাবে যদি গুরু দ্রোণের কানে তার পুত্র অশ্বত্থামার মৃত্যুসংবাদ পৌঁছানো যায়, তাহলে তাকে হারানো সম্ভব। সুচতুর শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ মতে পান্ডবদের মেঝ ভাই ভীম তখন একটা হাতির নামকরণ করেন ‘অশ্বত্থামা’। তারপর বড়ভাই যুধিষ্ঠিরের সামনে হত্যা করেন সেই হাতিকে। গুরু দ্রোণ যুধিষ্ঠিরের কথা খুব বিশ্বাস করতেন। তাই যুধিষ্ঠির দ্রোণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অশ্বত্থামা হতঃ ইতি গজ’ (অশ্বত্থামা নামক হাতি নিহত হয়েছে)। ‘ইতি গজ’ শব্দটি আস্তে উচ্চারণ করাতে গুরু দ্রোণ মনে করেন বুঝি তার প্রাণপ্রিয় পুত্র আর নেই! পুত্রশোকে তখন অস্ত্র ও বেঁচে থাকার ইচ্ছা ত্যাগ করেন তিনি। এই সুযোগে পান্ডবদের বীর ধৃষ্টদ্যুম্ন তাকে হত্যা করেন।



যুদ্ধের সময় ভগবান শিবের দেওয়া চন্দ্রহ্রাস খড়্গ নিয়ে রাতের আঁধারে পাণ্ডবশিবিরে হানা দিলেন দ্রোণপুত্র। পঞ্চপাণ্ডব ভেবে একে একে হত্যা করলেন দ্রৌপদীর পাঁচ ঘুমন্ত সন্তান প্রতিবিন্ধ্য, সুতসোম, শ্রুতকীর্তি, শতানীক আর শ্রুতসেনকে। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে ঘুমের মধ্যেই মস্তকচ্ছেদন করলেন শিখণ্ডীর। অশ্বত্থামার রোষে প্রাণ হারালেন আরও অনেক যোদ্ধাই!
পঞ্চ পাণ্ডব তখন কৃষ্ণের সঙ্গে রয়েছেন গঙ্গাতীরে। উপভোগ করছেন যুদ্ধজয়ের সাফল্য। তার মধ্যেই এই খবর যখন তাঁদের কানে এল, দ্রৌপদীর কান্নায় ভারি হয়ে উঠল চরাচর।এবার অবশ্য অর্জুন চুপ করে বসে থাকেননি। শপথ নিলেন, তিনি এর শেষ দেখে থাকবেন। রথে চড়ে তাই ধাওয়া করলেন অশ্বত্থামাকে।
অশ্বত্থামা যখন দেখলেন অর্জুন আসছেন, তখন তিনি প্রয়োগ করলেন ব্রহ্মশির অস্ত্র। এই অস্ত্রে পৃথিবী ধ্বংস হতে পারত। বিপদ বুঝে কৃষ্ণ থামিয়ে দিলেন সেই অস্ত্র। কিন্তু, কোথাও একটা সেটা নিক্ষেপ করতেই হত। অবশেষে পরামর্শ করে সেই অস্ত্র নিক্ষেপ করা হল অভিমন্যুর স্ত্রী উত্তরার গর্ভে।
উত্তরার সন্তানকে পরে অবশ্য প্রাণ দান করেছিলেন কৃষ্ণ। কিন্তু, অশ্বত্থামাকে ক্ষমা করেননি। অভিশাপ দিয়েছিলেন, এতগুলো অন্যায় হত্যার জন্য তিনি মৃত্যুর মাধ্যমে মুক্তি পাবেন না। কলিযুগের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁকে বেঁচে থাকতে হবে। চাইলেও আত্মহত্যা করে জ্বালা জুড়াতে পারবেন না তিনি।
আর, ক্ষতিপূরণ হিসেবে অশ্বত্থামা নিজের হাতে মাথার মণি কেটে দেন কৃষ্ণকে। কর্ণের যেমন কবচ-কুণ্ডল, অশ্বত্থামারও তেমনই ওই মণি! কৃষ্ণ দেবতা কৃষ্ণ তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন অশ্বত্থামা সারাজীবন দুঃখ দুর্দশা ভোগ করবে। অভিশাপ দিয়েছিলেন এক ভয়ংকর অভিশপ্ত জীবনের। যে জীবন থেকে মুক্তি নেই কোন। মৃত্যু কামনা করবেন তখন অশ্বত্থামা। কিন্তু মৃত্যু আসবে না তার জন্য। বেঁচে থাকবেন তিনি অনন্তকাল। ধুঁকে ধুঁকে। সীমাহীন কষ্ট শরীরে নিয়ে।

আসিরগড় দুর্গ তৈরি হয়েছিল ১৩৭ খ্রিস্টাব্দে। শোনা যায় আশা আহির নামে এক রাখাল বালক নিজের ক্ষমতায় রাজা হয়ে এই দুর্গ নির্মাণ করেন। এই দুর্গই এখন অশ্বত্থামার আবাসস্থল। বিগত ৫০০০ বছর ধরে এখানেই রয়েছেন তিনি। সবার চোখের আড়ালে।
কাহিনি বলে, আসিরগড় দুর্গে এক শিবমন্দির রয়েছে। প্রতি প্রভাতে শিব-উপাসক অশ্বত্থামা সবার আগে সেই মন্দিরে পূজার্চনা করেন। ভোরের আলো ফুটলেই দেখা যায়, শিবলিঙ্গ সাজানো রয়েছে ফুলে, চন্দনে। কিন্তু, কোথা থেকে সেই ফুল-চন্দন এল, কেউ বলতে পারেন না। বলতে পারেন না, কখন এসে অশ্বত্থামা নিত্যপূজা সম্পন্ন করেছেন।রাতের বেলায় এই দুর্গে অনেকেই দেখেছেন দ্রোণপুত্রকে। দেখা গিয়েছে, রক্তাক্ত কপাল নিয়ে তিনি হাহাকার করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুর্গে। কারও সঙ্গে দেখা হলে ক্ষতের জ্বালা জুড়াবার জন্য তিনি হলুদ আর চন্দন ভিক্ষা করেন!

পৃথ্বীরাজ চৌহান, সাধু নারানাপ্পা-সহ আরও অনেকের সাথে অশ্বত্থামার দেখা হওয়ার ঘটনা রয়েছে।



‘হে অশ্বত্থামা, প্রতিটা মানুষের পাপ তুমি তোমার কাঁধে বহন করবে আর তা নিয়ে সমস্ত পৃথিবী ঘুরে বেড়াবে তুমি একা অশরীরী এক প্রেতের মতো। সময়ের শেষ পর্যন্ত কোন ভালোবাসা, সম্মান তোমার জীবনে আর কখনও আসবে না। কোন আশ্রয়, আদর আপ্যায়ন কিছুই নেই তোমার জন্য। নিশ্ছিদ্র একাকীত্ব হবে তোমার সঙ্গী। মানুষ ও সমাজ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হবে তুমি। সারা শরীর জুড়ে এমন ব্যাধি ও ঘা হবে তোমার, যা কোনদিনও সারবে না। সর্বোচ্চ হতভাগ্য জীবন হবে তোমার, অশ্বত্থামা। সময়ের সমাপ্তি পর্যন্ত কোন ভালোবাসা, স্নেহ না জুটুক তোমার জীবনে।


শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপে সে জখম কখনও সারবে না৷ শুধু তাই নয়, ঐ ঘায়ের স্থান কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হবে আর তা থাকবে কলিকালের শেষ পর্যন্ত। যতদিন না কলিযুগের শেষে দেবতা বিষ্ণুর দশম অবতার কল্কিদেবের সাথে তার দেখা হচ্ছে।

অহংকার, পাপ,অপকর্ম,নিজেকে সর্বোচ্চ মনে করার ফলে মহান যোদ্ধা এবং অমরত্ব বর থাকা শর্তেও নিজ কুকর্মের জন্যে অভিশাপ ভোগ করছেন এখনো অশ্বত্থামা।

Reading Time:
কুন্তীকে কেন অভিশাপ দিয়েছিলেন যুধিষ্ঠির?
July 18, 20230 Comments


মহাভারতের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে চারিত্রিক টানাপোড়েন, নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই এবং অস্তিত্বের সংকট। এই লড়াই আর টানাপোড়েন মহাভারতের চরিত্রদের টেনে নিয়ে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ পর্যন্ত। এই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জন্য কিছুটা হলেও মাতা কুন্তীও দায়ী বলে মনে করা হয়।


কুন্তীর বড় ছেলে স্বয়ং মহারাজ যুধিষ্ঠিরও তেমন মনে করেছিলেন। তাঁদের মা কথা লুকিয়ে না রাখলে এত বড় যুদ্ধ হত না বলে দাবি করেছিলেন। আর সেই ক্ষোভেই মাতা কুন্তী-সহ দুনিয়ার সব মহিলাদের তিনি অভিশাপ দেন। যে কোনও মহিলা কোনওদিনও কোনও কথা লুকিয়ে রাখতে পারবেন না।


দুর্বাশা মুনির থেকে আশীর্বাদ পেয়ে সূর্যের কৃপায় বিয়ের আগেই সন্তান লাভ করেছিলেন কুন্তী। কুমারী অবস্থার সেই পুত্রকে লোকলজ্জার ভয়ে জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। জন্মমুহূর্তে পরিত্যক্ত সেই শিশুকে সন্তান স্নেহে লালন পালন করেন মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের সারথি অধিরথ। সেই সন্তান কর্ণ বড় হয়ে মহাবীরে পরিণত হন। তিনি দুর্যোধনের পক্ষে যোগ দিয়ে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নামেন।

কর্ণের আসল পরিচয় না জেনেই তাঁকে হত্যা করেন অর্জুন। কর্ণের সাহায্য না পেলে দুর্যোধনের পক্ষে পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধে নামা সম্ভব ছিল না বলে মনে করেন যুধিষ্ঠির। কর্ণের আসল পরিচয় তাঁদের জানিয়ে দিলে মহাভারতের যুদ্ধই আর হত না বলে মায়ের কাছে অভিযোগ করেন যুধিষ্ঠির। তারপরেই নিজের মা ও সব নারীকে অভিশাপ দেন তিনি।

Reading Time: